ইন্ট্রুডাকশন টু প্রোগ্রামেবল লজিক কন্ট্রোলার(পিএলসি)

পিএলসি কি?

পিএলসি এর পূর্ণরূপ হচ্ছে প্রোগ্রামেবল লজিক কন্ট্রোলার। এটি একটি কম্পিউটারাইজড পদ্ধতি যেটির সাহায্যে একটি ফ্যাক্টরিতে বিভিন্ন যন্ত্রপাতি খুব সহজেই নিয়ন্ত্রণ করা যায়।

পিএলসি এর ইতিহাস :

এখন আমরা জানবো পিএলসি এর উৎপত্তি সম্পর্কে। প্রকৃতপক্ষে ১৯৬০ সালের দিকে আমেরিকাতে পিএলসি উদ্ভাবনের প্রয়োজনীয়তা অনুভূত হয় তৎকালীন রিলে লজিক সিস্টেমকে প্রতিস্থাপন করার জন্য। পিএলসি উদ্ভাবনের পূর্বে একটি ফ্যাক্টরিতে পুরো কন্ট্রোল সিস্টেম পরিচালনার জন্য অসংখ্য রিলে, টাইমার, কাউন্টার প্রভৃতি ব্যবহার করা হতো। সেক্ষেত্রে পুরো সিস্টেমটি অনেক জটিল হয়ে যেত। এত এত সংখ্যক রিলে, টাইমার ও কাউন্টার এর জন্য এর ওয়্যারিং সিস্টেমও জটিল হয়ে যেত। এইসব সমস্যা সমাধানের লক্ষে পিএলসি উদ্ভাবনের প্রয়োজন অনুভূত হয়।

১৯৬৮ সালে জেনারেল মোটরসের একজন ইঞ্জিনিয়ার এডওয়ার্ড আর. ক্লার্ক তৎকালীন রিলে সিস্টেম প্রতিস্থাপনের জন্য একটি প্রস্তাবের অনুরোধ করেন। এর প্রেক্ষিতে বেডফোর্ড ম্যাসাচুসেটস থেকে বেডফোর্ড অ্যাসোসিয়েটস ১৯৬৯ সালে প্রথম পিএলসি ০৮৪ উপস্থাপন করে যেটি ছিল বেডফোর্ড অ্যাসোসিয়েটস এর ৮৪ তম প্রকল্প।

পরবর্তীতে বেডফোর্ড অ্যাসোসিয়েটস সেই পিএলসি উৎপাদন, বিক্রয় এবং পরিষেবা প্রদানের জন্য “মোডিকন” নামে নতুন একটি কোম্পানি চালু করে। এই প্রোজেক্টটিতে ডিক মোর্লে নামে এক ভদ্রলোক কাজ করতেন যাকে বলা হতো “ফাদার অফ পিএলসি”। পরবর্তীতে ১৯৭৭ সালে এই মোডিকন ব্রান্ডটি “গোউল্ড ইলেক্ট্রনিক্স” এবং তারও পরে “স্নাইডার ইলেক্ট্রিক” এর নিকট বিক্রি করা হয়।

ঠিক সেই সময়ে ওডো জোসেফ স্ট্রাগার নামে এক ভদ্রলোক ছিলেন যাকেও “ফাদার অফ পিএলসি” বলা হয়, তিনি অ্যালেন-ব্র্যাডলি প্রোগ্রামেবল লজিক কন্ট্রোলার তৈরির সাথে জড়িত ছিলেন। অ্যালেন-ব্র্যাডলি বর্তমানে রকওয়েল অটোমেশন এর মালিকানাধীন একটি ব্র্যান্ড যেটি আমেরিকাতে অবস্থিত একটি প্রধান পিএলসি প্রস্তুতকারক।

পিএলসি এর অভ্যন্তরীণ গঠন প্রক্রিয়া :

পিএলসি উদ্ভাবনের পূর্বে একটি ফ্যাক্টরিতে বিভিন্ন যন্ত্রাংশ তারের মাধ্যমে যুক্ত ছিল। কিন্তু পিএলসি উদ্ভাবনের পর তারের পরিবর্তে পিএলসি এর ব্যবহার শুরু হয়। ফলে যন্ত্রগুলো সরাসরি তারের মাধ্যমে পরস্পরের সাথে যুক্ত হবার পরিবর্তে পিএলসি এর সাথে যুক্ত হয়। তারপর পিএলসি এর ভেতরের কন্ট্রোল প্রোগ্রামটি অন্যান্য যন্ত্রাংশের মধ্যে সংযোগ স্থাপন করে। কন্ট্রোল প্রোগ্রাম হল পিএলসি এর মেমোরিতে সংরক্ষিত কম্পিউটার প্রোগ্রাম যা পিএলসি কে জানায় যে সিস্টেমে কি চলছে।

একটি পিএলসি প্রধানত ২ টি অংশের সমন্বয়ে গঠিত।

  • সেন্ট্রাল প্রসেসিং ইউনিট
  • ইনপুট / আউটপুট সিস্টেম
সেন্ট্রাল প্রসেসিং ইউনিট :

সেন্ট্রাল প্রসেসিং ইউনিট হল একটি প্রোগ্রামেবল কন্ট্রোলারের অংশ যা তথ্য পুনরূধার, ডিকোড, সঞ্চয় এবং প্রক্রিয়াকরণ করে। এটি পিএলসি এর মেমোরিতে সংরক্ষিত কন্ট্রোল প্রোগ্রামটিও নিয়ন্ত্রণ করে। সিপিইউকে পিএলসি এর মস্তিষ্কও বলা হয়ে থাকে।

সিপিইউ এর ৩ টি অংশ থাকে।

  • প্রসেসর
  • মেমোরি সিস্টেম
  • পাওয়ার সাপ্লাই
প্রসেসর :

প্রসেসর হল সিপিইউ এর এমন একটি অংশ যা তথ্য কোড, ডিকোড এবং গণনা করে।

মেমোরি সিস্টেম :

মেমোরি সিস্টেম হল সিপিইউ এর এমন একটি অংশ যা পিএলসি এর সাথে সংযুক্ত বিভিন্ন যন্ত্রাংশ থেকে কন্ট্রোল প্রোগ্রাম এবং ডেটা উভয়েই সংরক্ষণ করে।

পাওয়ার সাপ্লাই :

পাওয়ার সাপ্লাই হল পিএলসি এর এমন একটি অংশ যা পিএলসি পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় ভোল্টেজ এবং কারেন্ট প্রদান করে।

ইনপুট / আউটপুট সিস্টেম :

ইনপুট / আউটপুট সিস্টেম পিএলসি এর এমন একটি অংশ যেখানে সমস্ত ফিল্ড ডিভাইসগুলো একত্রে সংযুক্ত থাকে। যদি সিপিইউকে পিএলসি এর মস্তিষ্ক ভাবা হয় তবে ইনপুট / আউটপুট সিস্টেমকে পিএলসি এর হাত ও পা ভাবা যেতে পারে।

ইনপুট / আউটপুট সিস্টেমের ২ টি অংশ।

  • র‍্যাক
  • ইনপুট / আউটপুট মডিউল
র‍্যাক :

র‍্যাক পিএলসি সিস্টেমের মেরুদণ্ড হিসেবে কাজ করে যা সমস্ত মডিউলকে যেমন সিপিইউ, পাওয়ার মডিউল, কমিউনিকেশন মডিউল, ইনপুট-আউটপুট মডিউল ইত্যাদিকে একত্রে ধরে রাখে। 

ইনপুট / আউটপুট মডিউল :

ইনপুট / আউটপুট মডিউল হল সংযোগ টার্মিনাল সহ এমন একটি ডিভাইস যেখানে ফিল্ড ডিভাইসগুলো তার দ্বারা যুক্ত। র‍্যাক এবং ইনপুট / আউটপুট মডিউল একসাথে পিএলসি এবং ফিল্ড ডিভাইস সমূহের মধ্যে ইন্টারফেস তৈরি করে। সঠিকভাবে সেটআপ করা হলে প্রতিটি ইনপুট / আউটপুট মডিউল তার সংশ্লিষ্ট ফিল্ড ডিভাইসের সাথে সংযুক্ত এবং র‍্যাকের একটি স্লটে নিরাপদে যুক্ত করা হয়।

ইনপুট / আউটপুট ডিভাইসসমূহ :

পিএলসি এর সাথে যুক্ত ফিল্ড ডিভাইসগুলোকে ২ টি ভাগে ভাগ করা হয়।

  • ইনপুট ডিভাইস
  • আউটপুট ডিভাইস
ইনপুট ডিভাইস :

ইনপুট ডিভাইস হল এমন একটি ডিভাইস যা একটি পিএলসিতে সংকেত / ডেটা সরবরাহ করে।

যেমন – পুশ সুইচ, লিমিট সুইচ, ফোটো সেন্সর, প্রক্সিমিটি সেন্সর ইত্যাদি।

আউটপুট ডিভাইস :

আউটপুট ডিভাইস হল এমন একটি ডিভাইস যা তাদের কন্ট্রোল ফাংশন সম্পাদন করার জন্য পিএলসি থেকে সংকেত / ডেটা পাওয়ার জন্য অপেক্ষা করে।

যেমন – রিলে, লাইট, মোটর, হিটার, সলিনয়েড ইত্যাদি।

পিএলসি এর প্রকারভেদ :

পিএলসি প্রধানত ২ প্রকার। যথা –

  • কমপ্যাক্ট পিএলসি
  • মোডুলার পিএলসি
কমপ্যাক্ট পিএলসি :

কমপ্যাক্ট টাইপ পিএলসিতে এক প্যাকেজের মধ্যেই সব থাকে। অর্থাৎ এতে ইনবিল্ট অবস্থায় একটি পাওয়ার সাপ্লাই, প্রসেসর এবং সীমিত সংখ্যক ইনপুট ও আউটপুট থাকে।

যেমন – Siemens Logo PLC

মোডুলার পিএলসি :

মোডুলার টাইপ পিএলসি হল একটি র‍্যাক ভিত্তিক সিস্টেম যার মধ্যে স্বতন্ত্র পাওয়ার সাপ্লাই, প্রসেসর, বিভিন্ন ইনপুট-আউটপুট মডিউল এবং বিভিন্ন এক্সটেনশন ইউনিট এক বা একাধিক র‍্যাকে মাউন্ট করা থাকে।

যেমন –Siemens S7 300 PLC

ইন্ডাস্ট্রিয়াল অটোমেশনে পিএলসি ব্যবহারের সুবিধাসমূহ :
  • পিএলসি ব্যবহারে ওয়্যারিং অনেক কম হয় ফলে খরচও হ্রাস পায়।
  • পিএলসি এর অভ্যন্তরে রিলে, কাউন্টার, টাইমার সব একসাথে থাকায় খুব অল্প জায়গায় এটি ইন্সটল করা যায়।
  • পিএলসি অনেক খারাপ পরিবেশেও খুব সুন্দরভাবে কাজ করার ক্ষমতা রাখে।
  • পিএলসি এর অভ্যন্তরে বিভিন্ন অপারেটর থাকে যা অনেক জটিল গণনা সম্পাদন করতে পারে।
  • পিএলসি ব্যবহারের ফলে খুব দ্রুত সময়ে যেকোনো সমস্যা খুঁজে বের করা যায়।
  • পিএলসিতে এক্সপানসন মডিউল ব্যবহারের সুযোগ থাকায় চাইলেই খুব সহজেই আমরা বহু সংখ্যক ইনপুট-আউটপুট ডিভাইস যুক্ত করতে পারি।

1 Comment.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *