প্রোগ্রামেবল লজিক কন্ট্রোলার বা পিএলসি ইউজার প্রোগ্রাম ইন্টার্নাল লজিক অনুসারে কাজ করে। পিএলসি একটি কম্পিউটার। কিন্তু এটা অফিস কম্পিউটারের মতো না। ইন্ডাস্ট্রিয়াল এনভারনমেন্টে মেশিন এবং ইকুইপমেন্ট কন্ট্রোল ও অপারেশনের কাজে পিএলসি ব্যবহৃত হয়।
ইতিহাসঃ
১৯৭০ সালের আগ পর্যন্ত বেশিরভাগ মেশিন রিলের মাধ্যমে কন্ট্রোল হতো যার জন্য অনেক বড় ইলেক্ট্রিক্যাল প্যানেল দরকার পড়তো। প্রথমে অটোমোবাইল উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান গাড়ি এসেম্বলিংয়ের প্ল্যান্টে পিএলসি ব্যবহার করে।
নতুন নতুন ব্র্যান্ডের গাড়ির উদ্ভাবনের ফলে প্রতি বছরই প্ল্যান্টে মেশিনারীজের পরিবর্তনের দরকার হতো। ফলে হার্ডওয়্যার কন্ট্রোল সিস্টেমকে লজিক কন্ট্রোল সিস্টেমে নিয়ে যাওয়ার প্রয়োজন পড়ে।
রিলে, কন্টাক্টর, টাইমার লজিক ব্যবহার করে ওয়্যারিং অনেক কঠিন হয়ে পড়তো। এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৬৯ সালে পিএলসির উদ্ভব হয়।
অ্যানালজিঃ
- ধরুন, বাইরে বেরোনোর আগে আপনি আকাশের দিকে তাকিয়ে দেখছেন বৃষ্টি হচ্ছে।
- চিন্তা করছেন বৃষ্টি ভেজার হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য ছাতা দরকার।
- ব্রেন আপনার হাত ও পাকে সিগন্যাল দেয় ছাতা নিয়ে আসার জন্য।
চোখ দিয়ে আপনি দেখছেন→ চোখ হচ্ছে এখানে ইনপুট ইউনিট
ব্রেনে চিন্তা করছেন ছাতা দরকার→ ব্রেন এখানে পিএলসির সিপিইউ
হাতে ছাতা নিয়েছেন→ মাংশপেশী হচ্ছে আউটপুট ইউনিট
কাজঃ
- পিএলসি ইনপুট সিগন্যাল যেমন- পুশ বাটনের পরিবর্তনে রিঅ্যাক্ট করে, প্রোগ্রাম এক্সিকিউশন হয় এবং এক্সটার্নাল লোড যেমন- ইনডিকেটরে আউটপুট সিগন্যাল পাঠায়।
- লোড কিভাবে অপারেট হবে তা ইউজার প্রোগ্রামের উপর নির্ভরশীল।
ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যাপ্লিকেশনঃ
অ্যাপ্লিকেশন-০১ঃ
- কনভেয়ার এলিভেটর রেস্টুরেন্টে খাবার বহন করে। গ্রাউন্ড ফ্লোরে খাবার প্রস্তুত হয় এবং উপরের ফ্লোরে খাবার এলিভেটরের মাধ্যমে পরিবেশনের জন্য পাঠানো হয়।
- খাওয়া শেষে খালি ডিশ আবার এলিভেটরের মাধ্যমে নিচে পাঠায়।
অ্যাপ্লিকেশন-০২ঃ
- এটি একটি বেভারেজ প্রসেসিং প্ল্যান্ট। প্রথমে বোতলে বেভারেজ ভর্তি হয় এবং ক্যাপ পরানো হয়।
- পরের স্টেপে বোতলের গায়ে লেবেল লাগানো হয়। লেবেল রোল আস্তে আস্তে কমতে থাকে। যখন রোল ছোট হয়ে আসে তখন অ্যালার্ম দিয়ে সতর্ক করে নতুন রোল ফিট করার জন্য।
- তারপর বোতলের গায়ে মানুফ্যাকচারিং তারিখ, মেয়াদউত্তীর্ণের তারিখ ইত্যাদি ইনফর্মেশন কোডিং করা হয়।
- প্যাকেজিং সেকশনে পিএলসি বোতল হিসাব করে কার্টনে উঠায়।
- সর্বশেষ কেসিং মেশিন কার্টনিং কমপ্লিট হয়ে পুরু প্রক্রিয়া শেষ করে।
পিএলসির সুবিধাঃ
- পিএলসি ব্যবহার না করলে মেশিন অপারেশন ও মোডিফিকেশনের জন্য প্রচুর রি-ওয়্যারিংয়ের দরকার পড়ে।
- পিএলসি ব্যবহারের ফলে শুধুমাত্র প্রোগ্রাম এডিট করেই মেশিনের অপারেশনে পরিবর্তন আনা যায়।
- এটা অনেক ফ্লেক্সিবল এবং ওয়্যারিং এররের চান্স খুব কম।
- লজিক পরিবর্তন করতে সময় অনেক কম লাগে।
- প্রোডাকশন ফ্লোরে জায়গা অনেক কম নেয়।
- বেশি ইনফর্মেশন থাকে সেজন্য অপারেটর দ্রুত ডায়াগনোসিস করতে পারে।
- ইনপুট পরিবর্তনের সাথে সাথে দ্রুত রিঅ্যাকশন করে আউটপুট নিয়ন্ত্রণ করে।
উদাহরণঃ
ফেইলার অ্যালার্ম অথবা হার্ডওয়্যার ফেইলার আইডেন্টিফাই করতে পারে। ধরুন, মেশিনের এয়ার সিলিন্ডার যদি রি-অ্যাক্ট করার জন্য ৫ সেকেন্ডের বেশি সময় নেয় তবে অপারেটরের কাছে পিএলসি থেকে মেসেজ যায় এয়ার সিলিন্ডার লিকেজ হয়েছে।
(নেটওয়ার্ক এবং ফিল্ড ডিভাইস কমিউনিকেশন)
- আপনি একটি পিএলসিকে অন্য আরেকটি পিএলসির সাথে কানেক্ট করে কম্পিউটারের মাধ্যমে কমিউনিকেশন করতে পারেন।
- বড় বড় মেনুফ্যাকচারিং প্ল্যান্টে প্রতিটি প্রসেসে আলাদা পিএলসি ব্যবহার করা হয়। ফলে পুরু সিস্টেম কন্ট্রোলের জন্য এক প্রসেসের পিএলসি অন্য প্রসেসের পিএলসির সাথে যোগাযোগ করে।
- রিমোট কম্পিউটার থেকে প্রসেসগুলোর মনিটরিং ও কন্ট্রোলের জন্য কমিউনিকেশন জরুরী বিষয় হয়ে দাঁড়ায়।
ফিচারঃ
পিএলসি কমপ্লেক্স ক্যালকুলেশন করতে পারে।
কমপ্লেক্স মোশন কন্ট্রোল এবং হাই স্পীড কাউন্টিং করতে পারে।
- কনভেয়ারের মোটরের এনকোডার থেকে ইনক্রিমেন্টাল মান হাই স্পীড কাউন্টার I/O মোডিউলে পাঠায়।
- I/O মোডিউল তদানুসারে ভিএফডিকে(VFD) কমান্ড করে এবং ভিএফডি(VFD) ঐ কমান্ড অনুসারে মোটর কন্ট্রোল করে।
পিএলসি অনেক রকম প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ সাপোর্ট করে যেমন- ল্যাডার ডায়াগ্রাম(LD), স্ট্রাকচারড টেক্সট(ST), সিকুয়েন্সিয়াল ফাংশন চার্ট(SFC), ফাংশন ব্লক ডায়াগ্রাম(FBD), ইন্সট্রাকশন লিস্ট(IL) ইত্যাদি।
ক্লাসিফিকেশনঃ
হার্ডওয়্যার সেকশন ইন্টিগ্রেট করে কমপ্যাক্ট এবং কম্বাইন করে মডোলার টাইপ পিএলসি বানানো হয়েছে।
কমপ্যাক্ট পিএলসিঃ
কমপ্যাক্ট পিএলসিতে কি কি থাকে?
→পাওয়ার সাপ্লাই ইউনিট
→I/O ইউনিট
→সিপিইউ ইউনিট
- কমপ্যাক্ট পিএলসি একই হাউজিং এ থাকে। তাদের I/O ক্যাপাসিটি কম থাকে(৬০ এর কম)।
মডোলার পিএলসিঃ
- পিএলসির কনফিগারেশন ইউজার কাস্টমাইজ করতে পারে।
- মডোলার পিএলসির ওয়াইড রেইঞ্জ ফাংশনালিটি আছে।